‘হ্যান্ডিক্রাফটকে নতুন আঙ্গিকে সকলের কাছে উপস্থাপন করতে চাই’ : মোঃ জাফিরুল ইসলাম
টানা এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউজে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোঃ জাফিরুল ইসলাম। অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে চাকুরি করলেও সবসময় উদ্যোক্তা হওয়ার সুপ্ত বাসনা মনে লালন করতেন এই উদ্যোক্তা। অবশেষে চাকুরীর পাঠ চুকিয়ে গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান ফেইথ ফ্যাশন। সম্প্রতি মুঠোফোনে নিজের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন তিনি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ফেইথ ফ্যাশন এর যাত্রা শুরুর গল্পটা শুনতে চাই
মোঃ জাফিরুল ইসলাম: আমি বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউজে টানা ১২ বছর ৮ মাস ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সেখানে কাজ করতে গিয়ে পেশাগত দায়িত্বের কারণে পণ্য উৎপাদনের প্রতিটি ধাপ আমাকে তদারকি করতে হয়েছে। সেই সময় থেকেই পণ্যের ডিজাইনে নতুনত্ব কিছু করার একটা ইচ্ছে আমার মনের ভিতরে তৈরি হয়। কিন্তু নিজের ইচ্ছে থাকলেই তো আমি প্রতিষ্ঠানের নিয়মের বাহিরে কিছু করতে পারবো না। তাই একটা সময় নিজের কনসেপ্টগুলো নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা থেকেই চাকুরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করি। নিজের স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে ফেইথ ফ্যাশন গড়ে তুলি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: যেহেতু আপনি একটি ফ্যাশন হাউজে টানা এক যুগেরও কিছু বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন সেহেতু ফেইথ ফ্যাশন থেকে উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইন কি আপনার সাবেক কর্মস্থলের উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইনগুলোর হুবহু নকল নাকি এক্ষেত্রে নতুনত্ব কিছু আছে?
মোঃ জাফিরুল ইসলাম: ফেইথ ফ্যাশন থেকে উৎপাদিত কোনো পন্যের ডিজাইন অবিকল নকল কিংবা কোনো ডিজাইনের রেপ্লিকা নয়। দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনের ভিতরে পাঞ্জাবি, নকশী কাঁথা, শাড়ি, কুর্তি সহ বিভিন্ন পণ্যের ডিজাইনে নতুনত্ব আনার জন্য যেসব কনসেপ্টগুলো নিয়ে কাজ করার সুপ্ত বাসনা ছিলো, আমি সেই কনসেপ্টগুলোকে নিয়েই মূলত কাজ করছি। আমি হ্যান্ডিক্রাফটকে নতুন আঙ্গিকে সকলের কাছে উপস্থাপন করতে চাই। কারণ আমি ফেইথ ফ্যাশনকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাই এক্ষেত্রে আমার কাছে প্রতিটি পণ্যের ডিজাইনে নতুনত্ব রাখা ছাড়া আর অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: উদ্যোক্তা হওয়ার পরে কাজের ক্ষেত্রে কেমন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন?
মোঃ জাফিরুল ইসলাম: শুধুমাত্র পণ্য উৎপাদন নিয়েই আমি চাকুরি জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি। পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমার কখনোই কাজ করা হয়নি। বর্তমানে আমি নিজেই যেহেতু উদ্যোক্তা, সেহেতু আমাকে পণ্য বিক্রির বিষয়টিও নিজেরই তদারকি করতে হয়। তাই এক্ষেত্রে আমাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে যে কোনো প্রতিবন্ধকতাই শেখার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সম্প্রতি আপনি অফলাইনে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি এফ-কর্মাসেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। এফ-কর্মাস নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
মোঃ জাফিরুল ইসলাম: ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই আমার অফলাইনে কাজ করার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চলতি বছরের জুন মাস থেকে আমি ফেইসবুকে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেইসবুক পেইজ অবমুক্ত করি। ফলে এখন আমাকে অফলাইন ও অনলাইন উভয় জায়গায় সমানতালে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পন্য সরবরাহ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে এফ-কর্মাসে কাজ করতে গিয়ে এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে।
অনলাইনে ক্রেতারা আমার উৎপাদিত পণ্যের সব বিষয়ে বিস্তারিত জানার পাশাপাশি আমার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোমত খোঁজ খবর নেওয়ার পরে পছন্দের পন্য অর্ডার দিয়ে থাকেন। এর ফলে আমার পণ্যগুলো বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও আমি বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। যদিও বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানের পন্য অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রে ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টে আছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে বিশ্বাসের সেতু তৈরি হতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। ক্রেতারা যত সচেতন হবে তত বেশি অনলাইনে বিক্রির পরিমানও বৃদ্ধি পাবে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: অনলাইনের অর্ডারকৃত পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিপননের ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন?
মোঃ জাফিরুল ইসলাম: বর্তমানে অনলাইনে কোনো ক্রেতা আমাকে কোনো পণ্য অর্ডার করলে আমি তার কাছ থেকে পণ্যের দাম বাবদ কোনো অগ্রিম অর্থ নিচ্ছি না। তাকে পণ্যটি সরবরাহ করার পরে তিনি যদি পন্যটি দেখে সন্তুষ্ট হন তখন তার কাছ থেকে পণ্যের দাম নেই। যদি এক্ষেত্রে সরবরাহকৃত পণ্যটি নিজ হাতে পাওয়ার পরে ক্রেতার পছন্দ না হয় এবং যদি তিনি সেই পণ্যটি ফেরত দেন সেক্ষেত্রেও আমি কোন চার্জ নিচ্ছিনা। অন্যদিকে পছন্দের পন্যটি হাতে পাওয়ার পরে ক্রেতার অভিমত জানারও চেষ্টা করছি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ফেইথ ফ্যাশনকে ঘিরে আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কি?
মোঃ জাফিরুল ইসলাম: আমি গ্রামের মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি আমার প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি আরো মজবুত করতে চাই। তার পরে ধাপে ধাপে সারাদেশের প্রতিটি জেলার আকর্ষণীয় ব্যবসাবান্ধব লোকেশনে ফেইথ ফ্যাশনের আউটলেট অবমুক্ত করতে চাই। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ২ শত ৫৭ জন কর্মী কাজ করছেন। কর্মীদের এই সংখ্যা আরো বাড়িয়ে আমি আগামী ১০ বছর পরে আমার প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজারেরও অধিক লোকের কর্মসংস্থান করতে চাই।
ছবি সংগ্রহ: ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি / লাইফস্টাইল / ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১