‘সিনেমা নির্মাণের এখনই সময়’ : কৌশিক শংকর দাস
টেলিভিশন মিডিয়ায় হাতে গোনা কয়েকজন গুণী নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম নাট্য নির্মাতা কৌশিক শংকর দাস। যার নির্মিত প্রতিটি ফিকশন রুচিশীল দর্শকদের হৃদয় জয় করেছে। বর্তমানে তিনি তার নির্মিতব্য ‘পাঞ্চ’ সিনেমাকে ঘিরে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি নিজের শত ব্যস্ততার মাঝেও ‘পাঞ্চ’ সিনেমা সহ মিডিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন তিনি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সিনেমা শিল্পের প্রভাবশালী নির্মাতারা যেখানে সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত অর্থের লাভ লোকসানের সমীকরণ মিলাতে ব্যস্ত সেখানে আপনি কেন হঠাৎ ‘পাঞ্চ’ সিনেমা নির্মাণের ঝুঁকি গ্রহণ করলেন?
কৌশিক শংকর দাস: সময়টা খারাপ বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো, সেরকম হতে পারে না। সেটা আমি কেন কেউই করে না। শুধুমাত্র আমি একা কি সিনেমা বানানোর চেষ্টা করছি? সবাইতো চেষ্টা করছে। সিনেমা শিল্পের অবস্থা ভালো না জেনেও সিনিয়র নির্মাতারা কিংবা নতুন নির্মাতাদের সবাই ভালো কিছুর করার জন্য চেষ্টা করছে। যাদের ধ্যান-ধারণা শুধুমাত্র সিনেমা নির্মাণ তারা কেউ বসে নেই, তারা সবাই কাজ করছে।
প্রেক্ষাগৃহে সিনেমার পর্দায় নির্মাতা হিসেবে নিজের নাম দেখাটা সকল নির্মাতার চূড়ান্ত স্বপ্ন। ‘পাঞ্চ’ সিনেমা নির্মাণ করাটা কোনো সাম্প্রতিককালের ঘটনা নয়। ২০১৩ সালেই ‘পাঞ্চ’ সিনেমার প্রযোজক আমাকে সিনেমা নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলো। সিনেমা ও নাটকের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। সিনেমা নির্মাণের জন্য সেই সময় আমি নিজেই প্রস্তত ছিলাম না, তাই সেই সময় আমি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। কারণ সিনেমা নির্মাণের জন্য আমার নিজের একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন। সিনেমা সম্পর্কে আমাকে আরো অনেক জানতে হবে, শিখতে হবে। পরবর্তীতে যখন ২০১৯ সালে ‘পাঞ্চ’ সিনেমার প্রযোজক আমার সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করেন, তখন আমার মনে হয়েছে সিনেমা নির্মাণের এখনই সময়।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘পাঞ্চ’ সিনেমার প্রধান নায়িকা চরিত্রের জন্য মেঘলা মুক্তাকে কেন নির্বাচন করলেন?
কৌশিক শংকর দাস: বেশ কয়েক বছর আগে একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের লাইফস্টাইল পাতায় মেঘলা মুক্তার ফটোশুটের ছবি দেখি। সেই ছবিগুলো দেখে আমি খুবই মুগ্ধ হয়ে যাই। তার (মেঘলা মুক্তা) মধ্যে একটা বেসিক স্মার্টনেস আছে। একইসঙ্গে সিনেমার নায়িকা হওয়ারও একটা ব্যাপার আছে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: প্রভাবশালী তারকার বদলে নায়কের চরিত্রে নিলয় আলমগীরকে কেন নির্বাচন করলেন?
কৌশিক শংকর দাস: সিনেমায় বক্সারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমার এমন একজনকে প্রয়োজন ছিলো যে ইতোমধ্যে সুঠাম দেহের অধিকারী। যাকে আমি সিনেমার গল্পের চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করে নিতে পারবো। আর সিনেমার গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের জন্য সবদিক থেকেই নিলয় উপযুক্ত।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘পাঞ্চ’ সিনেমা কি বায়োপিক?
কৌশিক শংকর দাস: মোটেই না।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তাহলে ‘পাঞ্চ’ কি রোমান্টিক অ্যাকশনধর্মী সিনেমা?
কৌশিক শংকর দাস: ‘পাঞ্চ’ সিনেমা সম্পূর্ণ রোমান্টিক ঘরানার সিনেমাও নয় আবার সম্পূর্ণ অ্যাকশন ঘরানার সিনেমাও নয় আবার সম্পূর্ণ নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ সিনেমাও নয়। ‘পাঞ্চ’ সিনেমায় সবকিছুই রয়েছে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ২০২২ সালের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এই দুটি ঈদের মধ্যে কোন ঈদে ‘পাঞ্চ’ সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে?
কৌশিক শংকর দাস: বাংলাদেশের সব হিট সিনেমা কি ঈদে মুক্তি পেয়েছে?
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তো এমনটাই দেখা যাচ্ছে?
কৌশিক শংকর দাস: সিনেমা মানেই ঈদ, আমরা নিজেরাই এই ধারাটা তৈরি করে ফেলেছি। এটা আমাদের সিনেমার দর্শকরা তৈরি করেননি। এটা আমাদের ভুল, এটা আমাদের সমস্যা। রাজ্জাক আঙ্কেলের (নায়ক রাজ রাজ্জাক) সব হিট সিনেমা কি ঈদে মুক্তি দিয়েছে? এমনটা তো করা হয়নি। ‘দেবী’ সিনেমা কি ঈদে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো? সাম্প্রতিককালে ‘দেবী’ হচ্ছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ব্যবসার দিক থেকে লাভজনক একটি সিনেমা। ‘আয়নাবাজি’ কি ঈদে মুক্তি দিয়েছিলো? একজন দর্শককে কি দেখানো হচ্ছে কিংবা কেমন ধরণের সিনেমা তৈরি করা হয়েছে তার উপর সবকিছু নির্ভর করে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তাহলে ২০২২ সালে রুচিশীল দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ‘পাঞ্চ’ সিনেমাটি উপভোগের সুযোগ পেতে যাচ্ছে?
কৌশিক শংকর দাস: ফিঙ্গার ক্রসড, আর কিছু বলতে চাই না।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ওটিটি প্লাটফর্মে সিনেমা মুক্তি দেওয়া কি উচিত?
কৌশিক শংকর দাস: অবশ্যই উচিত। এটা একজন প্রযোজকের জন্য ভালো তো। কারণ এর মাধ্যমে বাড়তি অর্থ আয়ের একটা সুযোগও রয়েছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি প্রদর্শনের পরে তা ওটিটিতে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে যারা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমাটি দেখতে পারেননি তারা তখন আফসোস করবেন কেন আমি সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখলাম না।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: হঠাৎ ভাইরাল হয়ে যাওয়া কাউকে নিয়ে কাজ করার বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
কৌশিক শংকর দাস: আমি এতে খারাপ কিছু দেখিনা। যখন দর্শকদের কাছে কারো চাহিদা ও জনপ্রিয়তা তৈরি হয় তখনই তিনি ভাইরাল হয়ে যান। হয়ত তার কিংবা তাদের এই জনপ্রিয়তাকে কোনো নির্মাতা, প্রযোজক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছে। কিন্তু ভবিষ্যতে ভাইরাল তারকারা টিকে থাকবে কিনা তা তাদের নিজেদের প্রতিভার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: অ্যাজেন্সিগুলোর সঙ্গে কাজ করে নতুন নির্মাতারা কি আদৌ কোনো লাভবান হচ্ছেন?
কৌশিক শংকর দাস: সবকিছুর ভালো ও খারাপ দুটো দিক রয়েছে। ভালো দিকটা হচ্ছে অ্যাজেন্সিগুলোর সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে নতুন নির্মাতারা তাদের সৃষ্টিশীল কাজগুলো দর্শকদের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পাচ্ছে। তাছাড়া নতুনদের তো ভালো কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে, নইলে তারা তাদের কাজগুলো দর্শকদেরকে কিভাবে দেখাবে? এক্ষেত্রে অ্যাজেন্সিগুলো নতুনদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে খারাপ দিকটা হচ্ছে, ওরা (অ্যাজেন্সিগুলো) সৃষ্টিশীল কাজের জায়গাগুলোতে হস্তক্ষেপ করে। টাকা বিনিয়োগ করা, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে চ্যাংঙ্ক ক্রয় করা থেকে শুরু করে কনটেন্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি অ্যাজেন্সিগুলোর তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। তাই ব্যবসায়িক দিক থেকে চিন্তা করলে কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত অর্থ কিভাবে মুনাফাসহ ফিরে আসবে সেটা অ্যাজেন্সিগুলো নিশ্চিত করতেই চাইবে। এখানে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কনটেন্ট নির্মাণের জায়গাটা তো একটি সৃষ্টিশীল কাজ। গল্পের প্রয়োজনে কোন অভিনয় শিল্পীকে কাস্টিং করা যায় কিংবা গল্পের কোথায় পরিবর্তন করা যায় এমন ধরনের পরামর্শ প্রয়োজনে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনো ধরণের সৃষ্টিশীল কাজে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াটা মোটেই কাম্য নয়।
ছবি সংগ্রহ: ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি / বিনোদন / ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১