‘আলেখনকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই’ : লায়লা নাসরিন

২০১৬ সালে যাত্রা শুরুর পরেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে রুচিশীল ক্রেতাদের নজর কেড়েছে ফ্যাশন হাউজ আলেখন-নকশার সব পণ্য। শিক্ষকতা করার পাশাপাশি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটি নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন লায়লা নাসরিন। বুধবার সন্ধ্যায় নিজের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন তিনি

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য আলেখন-নকশা নামটি নির্বাচনের গল্পটা শুনতে চাই?

লায়লা নাসরিন: নকশা নিয়েই মূলত আমার কাজ। আমি বিভিন্ন পণ্যের জন্য এক্সক্লুসিভ ডিজাইনগুলো কখনো নিজেই করি আবার কখনো আমার নির্দেশনা অনুযায়ী আমার কর্মীদের দিয়ে করাই। সেই কারণেই ২০১৬ সালে আমার প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরুতে নাম রেখেছিলাম নকশা। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম শুধুমাত্র নকশা এই কমন নামের কারণে আমার এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের পণ্যগুলো ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষন করতে পারছে না। কারণ যে কোন পণ্যের ব্যান্ডিংয়ের জন্য নামের নির্বাচন একটা বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই পরবর্তীতে আমি নকশা বা ডিজাইনের আর কি কি অর্থ থাকতে পারে তা খোঁজ করার পরে আলেখন নামটি পাওয়ার পরই কেন জানি নামটার প্রতি একটা আকর্ষন বা ভালোবাসা কাজ করলো। তারপর থেকেই আমার প্রতিষ্ঠানের নাম শুধুমাত্র নকশা নামের পরিবর্তে আলেখন-নকশা হলো।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আলেখন-নকশা মূলত কোন বয়সের ও সমাজের কোন শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য কাজ করে?

লায়লা নাসরিন: প্রাথমিকভাবে সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি পরতে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য কাজ শুরু করলেও বর্তমানে নবজাতক থেকে প্রবীণ সকল বয়সের ক্রেতাদের জন্য কাজ করছি। এছাড়াও সকল বয়সের ছেলেদের জন্য ফতুয়া ও পাঞ্জাবী নিয়েও কাজ করছি।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি একদিকে শিক্ষিকা অন্যদিকে উদ্যোক্তা। কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন কিভাবে করেন?

লায়লা নাসরিন: আমার কলেজের কাজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যেই শেষ হয় যায়। তারপরে আমি আমার আলেখন-নকশা এর কাজে পুরোপুরি ডুবে যাই। তাছাড়া আমার দুইজন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী সহযোগী রয়েছে। যারা আমার করা ডিজাইনমাফিক কাজগুলো তুলে ফেলে। এর মধ্যেই সময় করে সপ্তাহে একদিন আমার পন্যের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলো বাজার থেকে ক্রয় করে ফেলি।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: দেওয়ালে আঁকা একটি প্রজাপতির সামনে আপনি দাড়িয়ে আছেন। আপনার ফেইসবুকের ফটোগ্যালারিতে এমন একটি ছবি দেখলাম।

লায়লা নাসরিন: ওমা! আপনি তো দেখছি আমার ফেইসবুক প্রোফাইলের সবগুলো অ্যালবামের ছবিগুলো ঘেঁটে দেখেছেন।

লায়লা নাসরিন /ছবি: ফেইসবুক

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার ছবি দেখে মনে হচ্ছে আপনি প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র উদ্যোক্তা না হয়ে কেন শিক্ষকতার চাকুরি বেছে নিলেন?

লায়লা নাসরিন: চাকরিটা আমার ভালোবাসার জায়গা থেকে নেওয়া। আর ছেলেমেয়েদের (শিক্ষার্থীদের) আমার পড়াতে খুব ভালো লাগে, ওদের সঙ্গে (শিক্ষার্থীদের) সময় কাটাতেও আমার খুব ভালো লাগে। আমার অর্নাস শেষ করার পরেই কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করি। তখন থেকেই পড়ানোর নেশাটা শুরু। তবে ছোটকালে যখন বিভিন্ন আলোচনায় যেতাম সেখানে আমাদের শিক্ষকদের সম্মান দিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করতাম। সেই বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগতো। তখন মাঝে মধ্যে আমার ভিতরেও একটা বিশেষ অনুভূতি কাজ করতো, ইস! আমি যদি ম্যাডাম হতে পারতাম। আসলে ছেলেমেয়েদের (শিক্ষার্থীদের) পড়াতে আমি খুবই স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বর্তমানে আপনার অনলাইন ব্যবসা মূলত ফেইসবুক প্ল্যাটফর্মভিত্তিক। আপনি কাজের ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হচ্ছেন?

লায়লা নাসরিন: ফেইসবুকে ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাকে প্রতিদিন অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, একই ধরনের পণ্যের মধ্যে দামের অনেক তফাৎয়ের বিষয়টি। যাকে ফেইসবুকে ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলা যায়। এখানে উদাহরণ টেনে বলা যায়, একটি এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের ওড়না তৈরিতে যদি আমার ১ হাজার ৩ শত টাকা খরচ গুনতে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে আমি আমার মুনাফা রেখে এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের ওড়নাটি হয়ত ১ হাজার ৭ শত টাকায় বিক্রি করবো। কিন্তু সেখানে অনেকেই শুধুমাত্র ১ হাজার ৮ শত টাকায় এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের পুরো একটি শাড়ি বিক্রি করছেন। একইভাবে থ্রি পিসের ক্ষেত্রে এমন ঘটনাগুলো নিত্যদিনের সঙ্গী। এভাবে যারা নামমাত্র মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন তারা কিভাবে করছেন তা আসলেই আমার বোধ্যগম্য নয়। আবার মাঝে মাঝে এমন কিছু ক্রেতা পাই যারা আদৌ ক্রেতা কিনা সন্দেহ আছে, তারা পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জেনে শেষ মূহুর্তে কৌশলে না করে দেয়। বলতে গেলে ক্রেতাদের নিজেদের পন্য সম্পর্কে আর্কষিত করতে ব্যর্থ হওয়াটাও একটা প্রতিবন্ধকতা।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার প্রতিষ্ঠান আলেখন-নকশা বর্তমানে শুধুমাত্র এফ-কর্মাসেই আছে। নিজস্ব একটি ই-কর্মাস সাইটে কেন ব্যবসা করছেন না?

লায়লা নাসরিন: একজন ব্যবসায়ী যখন ব্যবসা করেন তখন তার কিছু ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকে। আমি প্রথমে এফ-কর্মাসকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। কারণ বর্তমান বিশ্বে ফেইসবুক নিঃসন্দেহে অন্যতম একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। এখানে যত সহজে আমার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রচার খুব অল্প সময়ে করতে পারবো তা শুরুতেই নিজস্ব একটি ই-কর্মাস সাইট দিয়ে আমি করতে পারবো না। অন্যদিকে আমি বিনামূল্যে ফেইসবুকে আলেখন-নকশার একটি পেইজ খুলেই আমার ব্যবসাটা খুব সহজেই পরিচালনা করতে পারছি। কিন্তু যখনই আমি ই-কর্মাস সাইটের মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইবো তখন সেখানে আমার খরচের বিষয়টাও চলে আসে। কারণ তখন আমাকে ডোমেইন ও হোস্টিং রেজিষ্ট্রেশননের বার্ষিক খরচ সহ ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য বিক্রির পর পেমেন্ট কিভাবে নিবো, সাইটের নিরাপত্তাসহ আনুসাঙ্গিক আরো অনেকগুলো বিষয় সামনে চলে আসবে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক মত এগিয়ে চললে সময়মত আলেখন-নকশার নিজস্ব ই-কর্মাস সাইটের যাত্রা শুরু হবে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: শিক্ষকতা ও উদ্যোক্তা এই দুয়ের মধ্যে কোথায় নিজেকে খুঁজে পান?

লায়লা নাসরিন: আমার নিজের প্রতিষ্ঠান আলেখন-নকশায় আমার আমিকে খুঁজে পাই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই?

লায়লা নাসরিন: শিক্ষকতা করার পাশাপাশি আমার আলেখন-নকশাকে নিয়ে আরো বহুদুর যেতে চাই। আমি চাই আমার এই প্রতিষ্ঠান যেটাকে আমি আলেখন বলতেই বেশি পছন্দ করি। আমার আলেখনকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। যেখানে ক্রেতারা প্রতিটি পণ্যে নতুনত্বের ছোয়া পাবে।

ছবি সংগ্রহ: ফেইসবুক

তানজিল আহমেদ জনি / লাইফস্টাইল / ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

You may also like...