‘বাণিজ্যিকভাবে গান লিখবো কিংবা গানের সুর করবো তা কখনো ভাবিনি’: শেখ মিলন
দীর্ঘ ২৫ বছরের গানের ক্যারিয়ারে অগ্রজ থেকে অনুজ প্রায় সকলের কাছে প্রিয় মুখ শেখ মিলন। যিনি একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও উপস্থাপক। সম্প্রতি নিজের সঙ্গীত ক্যারিয়ার সহ মিডিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় বেশ খোলামেলা কথা বলেছেন এই গুনী।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি একটি সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। সেক্ষেত্রে পেশাদার সাংবাদিক না হয়ে গানের জগতকেই কেন বেছে নিলেন?
শেখ মিলন: ভালো লাগা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি কিছু বিষয়ের উপর নিয়মিত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লেখালেখি করতাম। বলতে গেলে সেটা ছিলো আমার সখ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সঙ্গীত আমাকে প্রচন্ডভাবে তার দিকে টানে। সঙ্গীতের বাহিরে আমি কিছুই চিন্তা করতে পারি না। তাই সঙ্গীতকেই বেছে নিয়েছিলাম।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: গীতিকার, সুরকার হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই?
শেখ মিলন: আমি কুষ্টিয়ায় থাকাকালীন সময়ে সেখানে শীলন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। সেখানে আমি নিয়মিত সঙ্গীতচর্চ্চার পাশাপাশি টুকটাক লিখতাম। একইসঙ্গে কখনো কখনো গানের সুরও করতাম। এছাড়াও আমার এলাকার শিল্পীদের দিয়ে আমার লেখা ও সুরে গান গাওয়াতাম। এভাবেই আমার গান লেখা ও সুর করার জায়গাটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমি কখনো বাণিজ্যিকভাবে গান লিখবো কিংবা গানের সুর করবো তা কখনো ভাবিনি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও উপস্থাপক এই পাচঁটি জায়গার মধ্যে আপনি নিজেকে কোথায় খুঁজে পান?
শেখ মিলন: আমি কুষ্টিয়ার ছেলে। শুধুমাত্র গান গাওয়ার জন্যই কুষ্টিয়া থেকে আমি ঢাকায় পাড়ি জমাই। তার মানে আমার গান গাওয়ার নেশাটাই সর্বপ্রথম ছিলো। আমি পদ্ধতিগতভাবেই সঙ্গীতচর্চ্চা করেছি। আমি দীর্ঘদিন প্রয়্যাত ওস্তাদ পঙ্কজ কুমার মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিয়েছি। তার পরে ওস্তাদ রবীন্দ্রনাথ মল্লিকের কাছে পরিপূর্ণতা অর্জন করেছি। আমার শুরুটা মূলত গান দিয়েই। গান গাইতেও আমার ভালো লাগে আবার আমি গানের সুর করতেও প্রচন্ড পছন্দ করি। সেই সময়টায় আমি সুরের ভুবনে হারিয়ে যাই। তাই এক্ষেত্রে আমি নিজেকে কোথায় খুঁজে পাই সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে আসলেই দেওয়া সম্ভব না।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘কাটুক সময় গানে গানে’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে আপনি কি বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন?
শেখ মিলন: এই উত্তরটা একটু অন্যভাবে দেই।বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদেশুধুমাত্র মিডিয়ায় নয় বরং সারা বাংলাদেশে একটা অগ্রাধিকার পাই। অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ করলেও বাংলাদেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেলে আমি নিয়মিত গান পরিবেশনা করি। এক্ষেত্রে সেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা আমাকে একটু গুরুত্ব দেয়।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: কভার সং করে তারকাখ্যাতি পাওয়ার বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
শেখ মিলন: কভার সং করাটাকে আমি দোষের কিছু দেখি না। যিনি কভার সং গেয়ে আলোচনায় আসছেন তাকে ঠিকমত গান গাইতে হচ্ছে। যদি সেই শিল্পী খারাপ গাইতেন তাহলে শ্রোতারা অবশ্যই তাকে গ্রহন করতেন না। অন্যদিকে যারা বিভিন্ন রিয়েলিটি শো থেকে আসছেন তারা আমাদের দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। তারা অবশ্যই ভালো গান গাইছেন কিন্তু একই সঙ্গে তাদের জন্য একটা দুঃখের অধ্যায় রচিত হয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো মৌলিক গান হচ্ছে না। নিজেদের গান দাবী করার মত গান তারা করছেন না। এই বিষয়টাতে তাদের অবশ্যই নজর দেওয়া উচিত।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সঙ্গীত শিল্পের গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে?
শেখ মিলন: আমার দৃষ্টিতে গতিপথ ভালোর দিকেই যাচ্ছে। কারণ একটি সময় আমাদের দেশের সঙ্গীত শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব দরবারে আমাদের সঙ্গীত উপস্থাপন করতে পারছি। ফলে বিশ্বের সেরা সেরা কম্পোজারের কাজের সঙ্গে আমাদের গানের কম্পোজিশনগুলোর তুলনা করতে পারছি। এখন যদি আমাদের গানের কম্পোজিশন, সাউন্ড ডিজাইন, গায়কি, লিরিক ও টিউন মন্দ হয় তাহলে রুচিশীল শ্রোতারা তা গ্রহণ করবেন না। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় বর্তমানে আমাদের দেশে যথেষ্ট ভালো মানের কাজ হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে আমাদের গানগুলো আমরা পৌছে দিতে পারছি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: এ সময়ের ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই?
শেখ মিলন: আমাকে প্রতিদিনিই গানের কাজ করতে হয়। তবে বিশেষভাবে যদি বলি তাহলে বর্তমানে আমি১০০টি দেশের গানের একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। এছাড়াও বর্তমানে একটি সিনেমার গানের কাজও করছি।
ছবি সংগ্রহ: ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি / বিনোদন / ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১