‘আমি সৌভাগ্যক্রমে ডিআরআর বনে যাই’: মাজাহারুল হক
বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে ছাত্র অবস্থায় রোটারেক্ট মুভমেন্টে সম্পৃক্ত হন মাজাহারুল হক। পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য আমেরিকার অঙ্গরাজ্য টেক্সাসে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়েও নিজের শত ব্যস্ততার মাঝেও পুনরায় রোটারেক্ট মুভমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে রোটারেক্ট বর্ষ ২০১৬-২০১৭ এর রোটারেক্ট ডিস্ট্রিক্ট রিপ্রেজেনটেটিভ বা ডিআরআর নির্বাচিত হন। সম্প্রতি মুঠোফোনে রোটারেক্ট মুভমেন্ট ও নিজের ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন তিনি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আমেরিকায় পড়তে গিয়ে পুনরায় রেটারেক্ট মুভমেন্টে অংশগ্রহণের গল্পটা শুনতে চাই
মাজাহারুল হক: ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে আমেরিকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাষ্টার্স করতে আসার পরে প্রথম দিকে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। কিন্তু আমার প্রথম সেমিষ্টার শেষ হওয়ার পরে হঠাৎ একদিন মনে হলো আমি আমেরিকায় কেন রোটারেক্ট মুভমেন্ট শুরু করছি না? সেই থেকেই আবারো পুরোদমে রোটারেক্ট মুভমেন্ট করতে নেমে পড়লাম। শুরুর দিকে অনেক খোঁজ করলাম। কিন্তু আমার সুবিধাজনক কোনো স্থানে একটিও রোটারেক্ট ক্লাব পেলাম না। তাই একটা নতুন রোটারেক্ট ক্লাব খোলার জন্য কাজ শুরু করলাম।
যেহেতু আমি বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে ২০১১-২০১২ রোটারেক্ট বর্ষে রোটারেক্ট ক্লাব অব ঢাকা ইষ্ট ওয়েষ্ট এর প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তাই নতুন করে রোটারেক্ট ক্লাব খোলার জন্য এটা ছিলো আমার জন্য বাড়তি সুবিধা। প্রাথমিকভাবে আমার এলাকায় যেসব রোটারি ক্লাবগুলো ছিলো সেগুলোর ঠিকানা সংগ্রহ করি। এর ধারাবাহিকতায় আমি আমার রোটারি ডিস্ট্রিক্ট ৫৮৩০ এর বেশ কয়েকটি রোটারি ক্লাবে নতুন রোটারেক্ট ক্লাব খোলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেই। তারপরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় টেইলার সানরাইজ রোটারি ক্লাবের পক্ষ থেকে নতুন রোটারেক্ট ক্লাব খোলার জন্য ইতিবাচক সাড়া পেলাম। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬-২০১৭ রোটারেক্ট বর্ষে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রোটারেক্ট ক্লাব দ্যা ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, টেইলার এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে আমি রোটারেক্ট বর্ষ ২০১৬-২০১৭ এর ডিআরআর নির্বাচিত হই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বাংলাদেশের অনেক প্রভাবশালী রোটারেক্ট ক্লাবের পাষ্ট প্রেসিডেন্টরাও ডিআরআর নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। কিন্তু আপনি বিদেশে পড়তে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন ক্লাবের যাত্রা শুরুর পরেই ডিআরআর নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন করলেন?
মাজাহারুল হক: সময়,কাল, অবস্থানের প্রেক্ষিতে জীবনের অনেক সিদ্ধান্ত বদলে যায়। এখানে নতুন রোটারেক্ট ক্লাবের যাত্রা শুরুর করার পরে আমার মনে হয়েছে আমার ডিআরআর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে আমার কমিউনিটির জন্য আমি আরো বেশি কাজ করতে পারবো। তখন আমি আমার রোটারি ক্লাবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তারা আমার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। ব্যাস! আমি সৌভাগ্যক্রমে ডিআরআর বনে যাই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি কি মনে করেন শুধুমাত্র আমেরিকায় অবস্থানের কারণে আপনার জন্য রোটারেক্ট ডিস্ট্রিক্ট রিপ্রেজেনটেটিভ বা ডিআরআর নির্বাচনে জয়ী হওয়া খুব সহজ হয়েছে?
মাজাহারুল হক: হ্যা, আমেরিকায় অবস্থানের কারণে আসলেই আমার ডিআরআর নির্বাচিত হওয়াটা খুব সহজ হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে ডিআরআর নির্বাচিত হওয়াটা আসলেই অনেক কঠিন। সেখানে শুধুমাত্র দুটো রোটারেক্ট ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। এই দুটো রোটারেক্ট ডিস্ট্রিক্টের আওতায় অনেকগুলো রোটারেক্ট ক্লাব রয়েছে। কিন্তু আমেরিকার রোটারেক্ট ডিস্ট্রিক্টের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখানে অনেকগুলো রোটারেক্ট ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে এবং এর আওতাধীন রোটারেক্ট ক্লাবের সংখ্যাও খুব বেশি না। তবে বাংলাদেশে রোটারেক্ট মুভমেন্টে অনেক সমীকরণ মিলিয়ে একজন পাষ্ট প্রেসিডেন্টকে ডিআরআর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়। এখানে (আমেরিকা) ডিআরআর নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য খুব বেশি ডিআরআর নির্বাচনী সমীকরণ মেলানোর প্রয়োজন হয় না। একজন রোটারেক্ট তার কমিউনিটির জন্য নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে তাদের জন্য কেমন ধরনের ইতিবাচক কাজগুলো বা প্রজেক্টগুলো করছেন, মূলত এই বিষয়টাই এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর বাহিরে এখানে আর কোন সমীকরণ মেলানোর প্রয়োজন হয় না।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি ডিআরআর নির্বাচিত হওয়ার পরে কোন ধরনের প্রজেক্টগুলোতে বেশি সময় দিয়েছেন?
মাজাহারুল হক: ডিআরআর নির্বাচিত হওয়ার পরে আমার প্রধান লক্ষ্যই ছিলো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে রোটারেক্ট বিষয়টি আসলে কি? একজন রোটারেক্ট তার কমিউনিটির জন্য কি ধরনের কাজ করেন বা করতে পারেন ইত্যাদি বিষয়গুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আরো বেশি করে পরিচিত করা। যেন তাদের মধ্যে রোটারেক্ট হওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। তবে সেটা আমরা বেশ ভালো মতই করতে পেরেছিলাম।এছাড়াও আমাদের রোটারেক্ট ক্লাবের স্পন্সার রোটারি ক্লাব (টেইলার সানরাইজ রোটারি ক্লাব) কুকুরের বাসস্থান নিয়ে কাজ করে। আমাদের ক্লাব থেকে আমরা সেই প্রজেক্টেও স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে কাজ করেছি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: রোটারেক্ট মুভমেন্ট করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন?
মাজাহারুল হক: আমাদের রোটারেক্ট ক্লাবটি ছিলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক। তাই রোটারেক্ট সম্পর্কিত প্রতিটি কাজের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আমাদের স্পন্সর রোটারি ক্লাব (টেইলার সানরাইজ রোটারি ক্লাব) আমাদের রোটারেক্ট ক্লাবকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য ফান্ড সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কখনোই কোনো ধরনের সম্যস্যা হয় নি।ফলে আমাকে কখনোই আমাদের রোটারেক্ট ক্লাব নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বাংলাদেশের রোটারেক্ট মুভমেন্ট ও আমেরিকার রোটারেক্ট মুভমেন্টের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
মাজাহারুল হক: বাংলাদেশ কিংবা আমেরিকা কিংবা পৃথিবীর যে কোন দেশেই সকল রোটারেক্ট ক্লাব একটা নির্দিষ্ট নিয়মেই পরিচালিত হয়। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে যদি বলি তাহলে এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকা তো স্বাভাবিক। তবে আমেরিকার রোটারেক্ট ক্লাবগুলো তার স্পন্সার ক্লাবগুলোর সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি ভলেন্টিয়ার সার্ভিসে সময় দেয়।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বাংলাদেশের রোটারেক্ট ক্লাবগুলোর নিজেদের ক্লাবকে আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
মাজাহারুল হক: প্রতিটি রোটারেক্ট ক্লাবের একটা শক্তিশালী তথ্য ভান্ডার থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি রোটারেক্ট ক্লাবকে তার স্পন্সার ক্লাবের বিভিন্ন প্রজেক্টগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সম্পৃক্ত থাকতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি রোটারেক্ট ক্লাবের উচিত বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিংগুলোতে তার নিজ রোটারেক্ট ক্লাবের সদস্যদেরকে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এক্ষেত্রে তাদের স্পন্সর রোটারি ক্লাবের সহযোগীতা তাদের নেওয়া উচিত।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি তো বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকের তথ্য প্রযুক্তি পাতায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। প্রবাস জীবনেও কি লেখালেখির সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন?
মাজাহারুল হক: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকা প্যাট্রিয়টটেলন পত্রিকায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল নিয়মিত লেখালেখি করেছি। তবে এখন লেখালেখিতে আবারো অনিয়মিত হয়ে পড়েছি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: এ সময়ের ব্যস্ততা?
মাজাহারুল হক: বর্তমানে টেক্সাসের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছি। এছাড়াও টেইলার ওয়েব ডেভ নামে আমাদের একটি তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গ্রুপ রয়েছে। যেখানে আমরা সবাই তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করি। যেহেতু আমি এই গ্রপের একজন সক্রিয় সদস্য, তাই এই গ্রুপকেও আমার নিয়মিত সময় দিতে হয়।
ছবি সংগ্রহ: ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি / জন / লাইফস্টাইল / ১০ অক্টোবর ২০২১