ভালো কনসেপ্টে কাজ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ সবসময় বেশি থাকে’: খায়রুল পাপন
সম্প্রতি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙাতে প্রচার শুরু হয়েছে ধারাবাহিক নাটক ‘শারীরিক শিক্ষা’। যা নির্মাণ করেছেন নির্মাতা খায়রুল পাপন। টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউবেও প্রচারিত হওয়ার সুবাদে ইতোমধ্যে সকল বয়সের নেটিজেনদের মধ্যে ‘শারীরিক শিক্ষা’ ধারাবাহিক নাটকটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সম্প্রতি এই নাটকটিকে ঘিরে ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের ইনফ্লুয়েন্সার তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন হালের তরুন তুর্কি নির্মাতা খায়রুল পাপন।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘শারীরিক শিক্ষা’ এই কনসেপ্টের উপর নাটক নির্মাণে আগ্রহী কেন হলেন?
খায়রুল পাপন: ছাত্রজীবনে আমরা সবাই কমবেশি সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে স্কুলের পিটি ক্লাসে অংশগ্রহণ করতাম। সেই সময়টায় সবার মনে হতো ইস! যদি এই পিটি ক্লাসটা জীবনে না থাকতো। কিন্তু আমাদের যাপিত জীবনের জন্য শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু তা পরবর্তীতে আমরা জীবনের একটা পর্যায়ে এসে সবাই কমবেশি অনুধাবন করতে পারি। আমি মূলত সেই কনসেপ্টকে উপজীব্য করেই এই প্রজেক্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার নাটকে আকাশ ছোঁয়া তারকাদের উপস্থিতি নেই। এর কারণ কি?
খায়রুল পাপন: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একটি ভালো কনসেপ্টের প্রজেক্ট দর্শকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা যতটা বাড়াতে সক্ষম। যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই আকাশ ছোঁয়া তারকা কিংবা সুপরিচিত মুখ ভালো কনসেপ্টের অভাবে দর্শকের কাছে তার অভিনীত কনটেন্টটির গ্রহণযোগ্যতা প্রত্যাশা মাফিক বাড়াতে পারে না। আমার মূল লক্ষ্যই ছিলো আমি এমন একটা কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করবো যেখানে গল্পের প্রয়োজনে নির্বাচিত অভিনয় শিল্পীরা পর্দায় তাদের অভিনীত চরিত্রটি সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার নাটকে প্রচলিত গণমাধ্যম ও নিউ মিডিয়া এই দুই মাধ্যমের বিষয়গুলো কৌতুকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ঝুঁকির পরিমাণটা একটু বেশি হয়ে গেলো না?
খায়রুল পাপন: প্রচলিত গনমাধ্যম ও নিউ মিডিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ যেভাবে ভাবে আমি সেই বিষয়টাই এই নাটকে (‘শারীরিক শিক্ষা’) উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। আমি নিউ মিডিয়াকে মোটেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করিনি। অন্যদিকে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই নিউ মিডিয়ায় যারা তারকা তাদেরকে যেকোনো কারণেই হোক এখনো খুব বেশি গ্রহণ করার বদলে তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ট্রল বা মজা করে থাকে। আমি মূলত নিউ মিডিয়া থেকে উঠে আসা তারকারা যারা আছেন, তারা সমাজের যে কোন পর্যায় থেকেই উঠে আসুক না কেনো তাদের মধ্যে যারা ভালো কাজ করছেন তাদেরকে প্রচলিত গনমাধ্যমে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। তাছাড়া ভালো কনসেপ্টে কাজ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমান সবসময় বেশি থাকে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: মার্কেটিংয়ের কৌশলের কারণেই কি সাম্প্রতিক সময়ের একজন ভাইরাল টিকটকারকে ‘শারীরিক শিক্ষা’ নাটকে কাস্টিং করা হয়েছে?
খায়রুল পাপন: আমাদের নাটকের গল্পটা এই সময়ের। এটা কোন ধ্রুপদী সাহিত্যে কিংবা ঐতিহাসিক পটভূমির প্রেক্ষাপটে নির্মিত কোন ধারাবাহিক নয়। বর্তমান সময়ে নেটিজেনদের মধ্যে টিকটক নিঃসন্দেহে নিজের একটা শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে আমি যেসব দর্শকদের জন্য আমার এই ধারাবাহিকটি নির্মাণ করেছি তাদের সিংহভাগ ইউটিউবের দর্শকই নয় বরং এসব নেটিজেনরা টিকটক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপগুলোর নিয়মিত ব্যবহারকারী। যেহেতু আমার গল্পের কনসেপ্ট শারীরিক শিক্ষাকে ঘিরে তাই এখানে গল্পের প্রয়োজনে সমাজের যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো পেশার মানুষই আসতে পারে। যেহেতু আমার গল্পে রয়েছে ফিজিক্যাল ফিটনেসের জন্য একজন টিকটকার জিমে আসবে তাই এক্ষেত্রে আমি কোন নতুন মুখ কিংবা সুপরিচিত মুখ নির্বাচনের বদলের একজন পরিচিত টিকটকারকেই নির্বাচন করেছি। তাছাড়া আমিতো অবশ্যই চাইবো আমার কনেটেন্ট সকল শ্রেণীর দর্শকদের হৃদয় জয় করুক সেক্ষেত্রে যদি মার্কেটিংয়ের কোনো ইতিবাচক কৌশল প্রয়োগ করেও থাকি কিংবা যদি করতেও হয় সেটা তো করা যেতেই পারে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘শারীরিক শিক্ষা’ নাটকের ইউটিউব লিংঙ্কে নেটিজেনদের অনেকেই অভিনয়শিল্পীদের পোশাক নিয়ে খুব বাজে মন্তব্য করেছে। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
খায়রুল পাপন: জিমে ওয়ার্কআউট করা জন্য যেমন ধরনের পোশাক প্রয়োজন তেমন ধরণের পোশাকই এই নাটকের অভিনয় শিল্পীরা তাদের অভিনীত চরিত্রের চরিত্রায়নের জন্য পড়ছেন। যেসব নেটিজেনরা পোশাক নিয়ে নাটকের ইউটিউব লিংঙ্কের কমেন্টে বাজে মন্তব্য করছেন আমি তাদের উদ্দেশ্যে অত্যন্তু বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আপনারা আপনাদের আশেপাশের জিমগুলো পরিদর্শন করুন।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: নাটকের শীর্ষ সঙ্গীত ‘ময়না টিয়া’ গানের গীতিকার হিসেবে আপনার নাম দেখতে পেলাম। ভবিষতে কি গীতিকার হিসেবে নিয়মিত পাওয়া যাবে?
খায়রুল পাপন: নির্মাণকে ঘিরেই আমার সকল ধ্যান-ধারণা ও পেশা। যদিও আমি অনেক আগে থেকেই ফেইসবুকে আমার লেখা কবিতা প্রকাশ করি। ভবিষতে কেউ আমার কোনো কবিতাকে গানে রুপান্তর করতে চাইলে সেটা হতেই পারে। তবে গীতিকার হওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আর কবি হিসেবে কতটুক পথ চলতে চান?
খায়রুল পাপন: কবি সত্তাটা আমার নিজের মধ্যেই থাক। লেখালেখির মধ্যে আমি আমার মনের শান্তি খুঁজে পাই। কবিতাকে ঘিরে এর বেশি কিছু করার ইচ্ছে বা স্বপ্ন কোনোটাই আমার মনে জাগে নাই। তবে নিজের ভালোলাগা থেকে লেখালেখি চলবে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘শারীরিক শিক্ষা’ মোট কত পর্ব ধারাবাহিক নাটক হবে?
খায়রুল পাপন: প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ২০০ পর্ব নির্মাণ করা। বাকীটা দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করছে।
ছবি সংগ্রহ : ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি/ জন/ বিনোদন/ ২৬ মার্চ ২০২২