‘বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই’: সায়েম

পুরান ঢাকার ছেলে সায়েম আফরোজ সালেক। যিনি মিডিয়ায় আরজে সায়েম নামে সুপরিচিত মুখ। বাংলাদেশের বেসরকারী এফএম রেডিও সেক্টরের কিংবদন্তী রেডিও জকি বা আরজেদের তিনি একজন। রেডিও জকি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি টেলিভিশনে নিয়মিত উপস্থাপনা করার পাশাপাশি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেও রুচিশীল শ্রোতা-দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন সায়েম।

সম্প্রতি নিজের ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নির্মাতা খায়রুল পাপনের ‘শারীরিক শিক্ষা’ ধারাবাহিক নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের ইনফ্লুয়েন্সার তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন সায়েম।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ছোটবেলা থেকেই পোশাক নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার বদলে রেডিও জকি হওয়ার ইচ্ছে কেন হলো?

সায়েম সালেক: ছোটবেলায় পড়ালেখার পাশাপাশি আমি সবসময় ছবি আঁকা, আবৃত্তি করা, মঞ্চ নাটকে অভিনয় ও সংগঠন করার মত বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতাম। একইসঙ্গে নিজের পোশাক নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করার মূল নেপথ্যে ছিলো নিজের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে এমন পোশাক ডিজাইন করা যাতে আমার পোশাকগুলোতে ডিজাইনের ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল ভিন্নতা থাকে। তবে আমার আর জে হওয়ার ইচ্ছের বিষয়টা কাকতালীয়। হঠাৎ একদিন আমার কাছে রেডিও জকি হিসেবে কাজ শুরু করার প্রস্তাব আসে। কোন কিছু না বুঝেই রেডিও টুডে এর সেই ওর্য়াকশপে অংশগ্রহণ করি। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। নামের আগে জুড়ে গেলো আরজে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তাহলে আপনার আসল ইচ্ছেটা ছিলো কি?

সায়েম সালেক: আমার ইচ্ছে ছিলো বুয়েটের আর্কিটেক্ট বিভাগে পড়াশুনা করবো আর পাশাপাশি নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করে একজন ভালো অভিনেতা হবো। একইসঙ্গে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করবো। কিন্তু জীবনে ইচ্ছে থাকলেও কখনো কখনো কিছু ইচ্ছে সাময়িক সময়ের জন্য নিয়তি ও পরিবারের চাওয়ার কাছে ম্লান হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে ছোটবেলার কিছু সুপ্ত ইচ্ছে পূরণের কাজগুলো বর্তমানে চলছে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: রেডিও জকি হওয়ার কারণে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কেমন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন?

সায়েম সালেক: রেডিও জকি হিসেবে কাজ করার কারণে নিজের উপস্থাপনার একটা নির্দিষ্ট ধারা তৈরি হয়ে যায়। ফলে অভিনয় করার সময় নিজেকে কোনো চরিত্রের জন্য প্রস্তুত করতে কিছুটা সময় লাগে। বিশেষ করে যখন শহুরে কোন চরিত্রের বাহিরে গিয়ে ভিন্ন কোন পটভূমির চরিত্রে কাজ করতে হয়।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: রেডিও জকি মানেই কন্ঠের উপস্থাপনার কাজ। এটা অভিনয়ের সময় কি কোনো বাড়তি সুবিধা এনে দেয়?

সায়েম সালেক: ভয়েজ হচ্ছে অভিনয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা। ভয়েজ মডিউলেশনের কাজটা খুব গুরুত্বপর্ণূ। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে ভয়েজ মডিউলেশনের উপর নিয়মিত অনুশীলন করেছি। আমার কাছে উপস্থাপনা এক ধরনের অভিনয়। কারণ উপস্থাপনার সময় আমাকে নানান ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। অন্যদিকে অভিনয়ও এক ধরনের উপস্থাপনা। কারণ এক্ষেত্রে আমাকে প্রতিটি আলাদা আলাদা চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। তাই আমার কাছে মনে হয় অভিনয় ও উপস্থাপনা উভয় উভয়ের জন্য কাজে লাগে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তারকা রেডিও জকি হওয়ার কারণেই কি নির্মাতাদের সুনজরে বেশি পড়ছেন?

সায়েম সালেক: বিষয়টি মোটেও এমন নয়। যদিও কিছুটা সুবিধা পাই সত্যি। কিন্তু আসল ঘটনাটা উল্টো। আমার কাছে মনে হয় আমি যদি সরাসরি অভিনয় করার মাধ্যমে একজন অভিনেতা হিসেবে ধাপে ধাপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতাম তাহলে সেটা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো হতো। আমি বিগত দশ বছরে প্রায় ৩৫টি নাটকে অভিনয় করেছি। যার মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক নাটকও ছিলো। আসলে আমার নিজের প্রচারণা করতে কখনো ভালো লাগে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্মাতারা যখন শুনে আমি অভিনয় করি তখন তারা কিছুটা অবাক হয়। তাদের মধ্যে যখন কেউ আমাকে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়। তখন সবকিছু মিলে গেলেই কেবল আমার অভিনয়টা করা হয়।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে এমন কোনো ঘটনা কি আছে যা আপনার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে?

সায়েম সালেক: বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী এফএম রেডিও স্টেশন রেডিও টুডে দিয়ে আমার আরজে হওয়াটাই তো আমার জীবনের গতিপথ বদলের যাওয়ার মতো একটি ঘটনা। এরপরে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে আমার নিয়মিত উপস্থাপনার শো ‘জেগে আছো কি’ সুপারহিট শো। সেটাও আমার জীবনের গতিপথ আরো একটু বদলে দেয়। তাই জীবনের গতিপথ হঠাৎ বদলে যাওয়ার বিষয়টি আমি বিশ্বাস করি না। বরং একটু একটু করে বদলায়।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: অভিনয়, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও ফ্যাশন ডিজাইনিং এগুলোর মধ্যে কোথায় নিজেকে খুঁজে পান?

সায়েম সালেক: যেকোনো সৃষ্টিশীল জায়গায় আমি আমাকে খুঁজে পাই। আমি এটা বলছি না, আমি সবকিছুতেই সেরা কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা, আবৃত্তি, মঞ্চে অভিনয় এগুলোর সবগুলোই আমার খুব পছন্দের জায়গা ছিলো। যদিও বর্তমানে আমি কবিতা আবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছি। ছবি আঁকার বেলায়ও অনিয়মিত। উপস্থাপনা ও অভিনয়টাই নিয়মিত চলছে। তবে বেলাশেষে আমি আমার জীবনে নিজেকে একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবেই দেখতে চাই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনাকে সিনেমায় পাচ্ছি না কেন?

সায়েম সালেক: সিনেমা আমাকে পাচ্ছে না তাই কিংবা সিনেমা হয়ত আমাকে চাইছে না। কিংবা বর্তমানে যেমন ধরনের সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে হয়ত সেই ধরনের সিনেমাগুলোতে আমি অভিনয় করতে চাইছি না। অন্যদিকে আমি যেমন ধরণের সিনেমাগুলোতে অভিনয় করতে চাই সেই সিনেমাগুলো হয়ত আমাকে চায় না।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তাহলে আপনি কেমন ধরণের সিনেমায় অভিনয় করতে চান?

সায়েম সালেক: আমি মূলত চাই এমন ধরনের সিনেমা যেখানে আমি আমার অভিনয়টুকু করতে পারবো। আমি মূলত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আসলে আমার লুক বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমার হলেও আমার ভিতরটা আর্ট ফিল্মের। এটা আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশন। যদিও আমার কাছে সিনেমা মানে সিনেমা। তার মধ্যে বাণিজ্যিক ঘরানা নাকি আর্ট ফিল্ম এমন কোনো ভেদাভেদ নেই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনুপস্থিত কেন?

সায়েম সালেক: আমার খুবই ইচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজ করার কিন্তু কোথাও যেন ব্যাটে-বলে মিলছে না। তবে আমি ওটিটির জন্য আমার দিক থেকে প্রস্তুত। আমার জীবনে অনেক কিছুই সময়ের আগে পেয়েছি। আবার অনেক কিছু দেরিতে পেয়েছি। হয়ত এক্ষেত্রেও তেমনটিই হবে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: মিডিয়ার কোনো নারীকে ঘিরে আপনার প্রেমকাহিনী নেই কেন? তাহলে কি আপনি গোপনে কোনো প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ?

সায়েম সালেক: আমি পুরোদস্তুর সিঙ্গেল তবে চুটিয়ে প্রেম করতে চাই, মনে প্রাণে কারো প্রেমে নিজেকে আবদ্ধ করতে চাই। আর মিডিয়ায় আমার প্রেমকাহিনী না থাকার মূল কারণ হলো আমি যখন মিডিয়ায় কাজ করি তখন আমার পুরো মনোযোগ আমার কাজের প্রতিই থাকে। সেক্ষেত্রে আমার সহকর্মী কে আছেন সেটা কখনো বিশেষভাবে বিবেচনা করিও নাই, মাথা্য়ও আসে নাই। মিডিয়ায় কাজের শুরু থেকেই আমার মাথায় ছিলো আমি মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করবো। মিডিয়ার ফেইম আমাকে সবসময় টানে আর অন্য কিছু না। আমার ভিতরে নিজেকে ভাইরাল করার বিষয়টা ভর করে না। আমার ভিতরে জনপ্রিয়তার বিষয়টি বেশি ভর করে। বলতে গেলে আমি ওল্ড স্কুল টাইপ।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: মিডিয়ার বিভিন্ন পার্টিতে আপনার উপস্থিতি কম কেন?

সায়েম সালেক: আমি যখন রেডিওতে কাজ করি তখন আমার সামনে কেউ থাকে না। আমি একাই সব কিছু পরিচালনা করি। আবার যখন টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য শুটিং করি তখন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ থাকে। অর্থাৎ আমি যখনই যেই কাজ করি শুধুমাত্র আমার সেই কাজের পরিবেশটা ভালো লাগে। এর বাহিরের আমার কোন ক্রাউড ভালো লাগে না। যখনই আমার রেডিওতে লাইভ শো শেষ হয় কিংবা নাটকের শুটিংয়ের কাজ শেষ হয় তারপরেই আমি আমার ভার্চূয়াল ও রিয়েল দুনিয়ায় ব্যস্ত হই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘সায়েমিও’ নিয়ে কিছু শুনতে চাই..

সায়েম সালেক: পোশাক বিক্রি করার চেয়ে পোশাকের ডিজাইন নিয়ে খেলাটা অর্থাৎ নতুন কিছু তৈরি করার বিষয়টি আমার কাছে বেশি মজার লাগে। যদিও ছোটবেলা ডিজাইন করার সময় মাথায় কাজ করতো আমার ডিজাইন করা পোশাক আমি ছাড়া আর অন্য কেউ পড়বে না। কিন্তু এখন হয়েছে উল্টো। আমি চাই আমার ডিজাইন করা পোশাক সবাই পড়বে। ‘সায়েমো’কে নিয়ে অফলাইন ও অনলাইনে বহুদুর যেতে চাই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: এ সময়ের ব্যস্ততা ও ভবিষৎ পরিকল্পনা..

সায়েম সালেক: আগামী এক বছর আমার ব্যবসায় পুরোদস্তর মনোযোগ দিতে চাই, তাই ব্যবসাকে ঘিরেই বেশি ব্যস্ততা। এর পাশাপাশি নিজের পছন্দের কাজগুলো করবো। শুধুমাত্র টেলিভিশনের পর্দায় থাকার জন্য কোনো কাজ করবো না। যেমন বর্তমানে খায়রুল পাপনের ‘শারীরিক শিক্ষা’ নাটকে জিম প্রশিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করছি। যখনই কোন ভালো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাবো তখনই সেটা লুফে নিবো।

ছবি সংগ্রহ : ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি/ জন/ বিনোদন/ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

You may also like...