‘পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সিনেমা বানাতে চাই’: মনজুরুল ইসলাম মেঘ
ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি ও সংগঠনের দুনিয়াকেই আপন করে নিয়েছেন সংগঠক, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা মনজুরুল ইসলাম মেঘ। যার জীবনে সংগঠন হচ্ছে তার কাঠামো আর সৃজন হচ্ছে তার রক্তমাংশ।
সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিজীবন, সৃজনশীল কাজ ও চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের ইনফ্লুয়েন্সার তানজিল আহমেদ জনি এর সঙ্গে এক আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন হালের এই তরুন তুর্কি মেঘ।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: রুচিশীল দর্শকদের জন্য ‘ময়না’ সিনেমা কি বার্তা নিয়ে আসবে?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: আমি সকল দর্শকদেরকেই রুচিশীল মনে করি, হয়তো একেক জনের রুচি বা পছন্দ একেক রকম। ‘ময়না’ সিনেমাটি কাহিনী নির্ভর। এখানে কাহিনীর গভীরতা যেমন আছে, তেমনি আছে চিত্রায়নের বিচিত্র সমাবেশ। সিনেমাটিতে অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ভালো অভিনয় করেছেন। ‘ময়না’ সিনেমায় দর্শক একটি গল্প খুঁজে পাবেন। যে গল্পটি হবে কখনো দর্শকের নিজের, কখনো হবে তার পরিবারের কিংবা তার আশে পাশের সমাজের। ‘ময়না’ সিনেমা সকল শ্রেণির দর্শকের জন্য হয়ে উঠতে পারে নিরেট একটি অভিজ্ঞতার কাহিনীবার্তা।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘ময়না’ সিনেমার শিল্পী নির্বাচন বিশেষ করে নায়িকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার স্বাধীনতা কতটুকু ছিলো?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: ‘ময়না’ সিনেমার কাহিনীকার ও প্রযোজক আলিম উল্লাহ খোকন যখন আমাকে এই সিনেমার (‘ময়না’) কাহিনী শুনালেন এবং পরবর্তীতে যখন সিনেমার চিত্রনাট্য আমাকে দিয়ে লেখাতে চাইলেন, তখন আমি কয়েক মাস সময় নিলাম। তারপরে চিত্রনাট্য লেখার পরে যখন জমা দিবো ঠিক তার কয়েক দিন আগে সিনেমাটি পরিচালনার জন্য প্রস্তাব পাই। আমি তাকে (আলিম উল্লাহ খোকন) জানালাম, আগে চিত্রনাট্য দেখেন। যখন পরিচালনার বিষয়ে কথা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছিলো তখন আমি বলেছিলাম, সিনেমা বানাতে আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে এবং আপনার (আলিম উল্লাহ খোকন) সাথে কথা না বলে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো না। তিনি আমাকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন আসি কাস্টিং বিষয়ে- গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি আমরা টিমের সদস্যরা আলাপ করেই চূড়ান্ত করেছি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি ছাত্রজীবনে লিও ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা সৃষ্টিশীল কাজ করার ক্ষেত্রে কেমন ধরনের সহযোগিতা করছে?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: আমি ছাত্র জীবনে সামাজিক সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম। নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যই এসব সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া। সাধারণ সদস্য থেকে ধাপে ধাপে সেই সকল সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি লিও ক্লাবে সেক্রেটারী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাগুলো পরবর্তীতে আমার কাজে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। বিশেষত সিনেম্যাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের মতন বড় একটি কাজ বাস্তবায়ন করতে। অন্যদিকে সিনেমা নির্মানের ক্ষেত্রেও আমার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ভূমিকা রেখেছে, আর লেখালেখির ক্ষেত্রে তো বটেই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: লেখালেখির কোন সেক্টরে নিজেকে খুঁজে পান?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়ে, সেখান থেকে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস লিখেছি। এরমধ্যে কিছু প্রচারিত হলেও বই করা হয়নি। তবে বর্তমানে গবেষণা ধর্মী লেখায় নিজেকে খুঁজে পাই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার গবেষণাধর্মী লেখাগুলোর সম্পর্কে কিছু জানতে চাই..
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: ভারতের শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ভবনে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে “বাংলা চলচ্চিত্র” বিষয়ে একটি গবেষনা পত্র এবং কোস্তারিকার একটি সেমিনারে দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র নিয়েও একটি গবেষনাপত্র তুলে ধরেছিলাম। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আর্ন্তজাতিক সেমিনারে “বাংলার আদি সংস্কৃতি” নিয়ে একটি গবেষনাপত্র তুলে ধরেছিলাম।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনার গবেষনাধর্মী বই ‘বগুড়ার কবি লেখক ও সম্পাদক পরিচিতি’ প্রকাশের পরে আর কোনো বই কেন প্রকাশ করছেন না?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: আসলে লেখা আর সেটি প্রকাশ করা ভিন্ন জিনিস। বই প্রকাশ একটি জটিল সমীকরণ। বই প্রকাশ করার জন্য যে সময় দেওয়ার প্রয়োজন সেটি আমি পাইনা। তবে দেশের অনেক প্রকাশনী থেকে আমার কাছে বই প্রকাশের প্রস্তাব নিয়মিত আসে, কোথাও যেনো ব্যাটে বলে মিলছে না তাই আর বই প্রকাশ করা হয়ে উঠছে না।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সংগঠক নাকি সৃষ্টিশীল জগত এই দুটোর কোনটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: আমি আসলে নিভৃতচারী একজন সৃজনশীল কাজের কর্মী হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই ও সাধারণ জীবন উপভোগ করতে চাই। সংগঠন আমার কাঠামো, সৃজন আমার রক্তমাংশ। আমি আসলে প্রকৃতির সন্তান, আমার গায়ে গ্রামের পথের ধুলি, কাদামাটি মেখে আছে, প্রকৃতি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে আমি হয়তো সেখানেই যাবো।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সিনেমেকিং সম্পর্কে জানতে চাই..
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: সিনেম্যাকিং প্রযোজনা ও সিনেমা বিষয় পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান। আমরা কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজনার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও পরিবেশনা বিষয়ক পরামর্শ সেবা প্রদান করে থাকি বিনামূল্যে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সিনেমেকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২২ সম্পর্কে সবশেষ আপডেট কি?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: সিনেম্যাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১ এ সারা পৃথিবী থেকে ১২১ টি দেশের সিনেমা অংশগ্রহণ করেছিলো। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে উৎসব ২০২২ এর জন্য চলচ্চিত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে, ইতোমধ্যেই ৬৫ টি দেশের চলচ্চিত্র জমা পড়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত সিনেমা জমা দেওয়া যাবে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি কি বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব কেন্দ্রিক নির্মাতা হতে চান নাকি ঢাকাই সিনেমার বক্নঅফিস কাঁপানো নির্মাতা হতে চান?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: আমি আসলে সিনেমা নির্মান করতে চাই। সিনেমার গুনেই সিনেমা আসন করে নিবে উপযুক্ত জায়গায়।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপনি কি চলচ্চিত্র নিয়েই কাজ করবেন নাকি এর পাশাপাশি বিভিন্ন ফিকশন-ননফিকশনও নির্মানের চিন্তা রয়েছে?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: আসলে চলচ্চিত্র নিয়ে আমার টোটাল একটা প্লান আছে। আগামি ১০ বছরের মধ্যে চলচ্চিত্রের ভাষা, আঙ্গিক, উপস্থাপনা সব পরিবর্তন হয়ে যাবে। বৈশ্বিক কারণে চলচ্চিত্রের মার্কেট এখন একটিই, সেটি হলো ওপেন মার্কেট। আমি আসলে সিনেমা নির্মানের বিষয়ে বৈশ্বিক বিষয়টি নিয়ে ভাবতেছি। সম্প্রতি গ্রীসের একটি এনিমেশন ফিল্মে আমি ভয়েজ (কন্ঠ) দিয়েছি, এই অভিজ্ঞতা আমি নিয়েছি শুধু বিষয়টিকে ভালো ভাবে বুঝার জন্য। কারণ আগামিতে রক্তমাংশের অভিনেতাদের পাশাপাশি সফটওয়ারবেইজ চরিত্রও সিনেমা নির্মানে প্রয়োজন হবে। আমি বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে জুরী হিসেবে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দেশের সিনেমা দেখে স্কীল ডেভেলোপ করছি। আমি আসলে নিউ জেনারেশনের থিমে কাজ করতে চাই। মানে পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সিনেমা বানাতে চাই। আমি শুধু সিনেমা নির্মানেই থাকতে চাই।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের পরিবেশনার বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা নেই। তবে বাংলাদেশে বিকল্প পদ্ধতিতে সিনেমা দেখানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে, সেটি কষ্ঠসাধ্য। আন্তর্জাতিক পরিবেশনা বা আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পরিবেশনার জন্য প্রযোজকদের বাজেট লাগবে একই সাথে পরিচালকদেরকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ বা পরামর্শ সেবা গ্রহণ করতে হবে বলে আমি মনে করি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: আপকামিং প্রজেক্টগুলো সম্পর্কে জানতে চাই…
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: ‘ময়না’ সিনেমার শুটিং শেষ করলাম। এছাড়া “বাশের সাঁকো” নামের একটি চলচ্চিত্রের প্রি-প্রডাকশন চলতেছে। “বেগম রোকেয়ার” বায়োপিক নিয়ে গবেষনা চলতেছে গত ৪ বছর যাবত, সেটির চিত্রনাট্য চূড়ান্ত প্রায়। আরো কিছু প্রজেক্ট রানিং, সেগুলোর কথা ভবিষতের জন্য আজ তোলা থাক।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: এ সময়ের ব্যস্ততা..
মনজুরুল ইসলাম মেঘ: সিনেম্যাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এর পরবর্তী সংস্করণ নিয়ে আর ‘ময়না’ সিনেমার পোস্ট-প্রডাকশনের কাজ নিয়েই বর্তমানে যত ব্যস্ততা। আর দেশের বাহিরে অষ্ট্রিলিয়ার একটি ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য লেখার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করা হচ্ছে।
ছবি: ফেইসবুক
তানজিল আহমেদ জনি/ জন/ বিনোদন/ ১৫ মে ২০২২