‘আমি ভাইরাল হতে চাই না’: নিঝুম রুবিনা

২০০৮ সালে একটি টেলিফোনী সংস্থার বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় অভিষিক্ত হন নিঝুম রুবিনা। মডেলিংয়ের মাধ্যমে কাজের শুরু হলেও পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার পাশাপাশি ঢাকাই সিনেমায়ও কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৩ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা যায় না’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় নিঝুম রুবিনার অভিষিক্ত হওয়ার পরের গল্পটা সকলের জানা। সম্প্রতি নির্মাতা দেবাশীষ সরকার এরসাধের টিয়া’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ঢালিউডের এই আবেদনময়ী সুন্দরী।

ব্যক্তি জীবনের শত ব্যস্ততার মাধেও নিজের সিনেমা ক্যারিয়ার ও নিজের ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের ইনফ্লুয়েন্সার তানজিল আহমেদ জনি এর মুখোমুখি হয়েছিলেন নিঝুম রুবিনা।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ঢাকাই সিনেমায় আশানুরুপ সুদিন অনুপস্থিতির সময়ে ‘সাধের টিয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তুমি কেন চুক্তিবদ্ধ হলে?

নিঝুম রুবিনা: ‘সাধের টিয়া’ নামটি কেন জানি আমার খুব ভালো লেগেছে। আসলে আমি কালজয়ী সিনেমা ‘সুজন সখী’ এর আমি অন্ধ ভক্ত। আমার কাছে এমন ধরণের গল্পগুলোর কদর সবসময় বেশি। ‘সাধের টিয়া’ সিনেমার গল্পের যে ধরণ, এমন ধরণের গল্পগুলো সাধারণত আমাদের ঢাকাই সিনেমার দর্শকদের হৃদয় খুব সহজেই জয় করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও এই গল্পে অনেক টুইস্ট আছে যা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা উপভোগ করতে পারবে। অন্যদিকে, আমাদের শুধুমাত্র অ্যাকশনধর্মী সিনেমা নির্মাণ করলেই হবে না বরং আমাদের প্রত্যেক ঘরানার দর্শকদের রুচির ও আগ্রহের উপর সম্মান ও প্রাধন্য দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। কারণ একেক দর্শকের রুচি একেক রকম। সেই দিক থেকে আমি বিশ্বাস করি সম্পূর্ণ মৌলিক ও শক্তিশালী গল্পের এই সিনেমাটি (‘সাধের টিয়া’) দর্শক লুফে নিবে। তাই আমার ‘সাধের টিয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ‘সাধের টিয়া’ সিনেমায় তোমার সাথে নায়ক চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন তিনি তোমার চেয়ে অভিনয়ে বেশি পারদর্শী নয়। তার সাথে জুটি বেঁধে অভিনয়ের ঝুঁকি গ্রহণ করলে কেন?

নিঝুম রুবিনা: আমার অভিনয়ের ক্যারিয়ারে আমি নিজেও নতুন মুখের সাথে কাজ করে অভ্যস্ত না। তবে এই সিনেমার পরিচালনায় যেহেতু নির্মাতা দেবাশীষ সরকার আছেন তাই এখানে ভরসা রাখা যায়। কারণ দাদার (দেবাশীষ সরকার) আরেকটি সিনেমায় নাকি জীবন চৌধুরীর অভিনয় যথেষ্ট ভালো ছিলো, এমনটাই আমি শুনেছি। যেহেতু ‘সাধের টিয়া’ সিনেমায় জীবন চৌধুরীকে বাউলের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে এবং এই গল্পে কোনো সুদর্শন হিরোর প্রযোজন নেই বরং চরিত্রের সঙ্গে মানায় এমন অভিনয় শিল্পী প্রয়োজন এবং এখানে জীবন চৌধুরী পারফেক্ট তাই নির্মাতা জীবন চৌধুরীকে এই সিনেমার জন্য নির্বাচন করেছেন।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ঈদের সিনেমায় নিঝুম রুবিনা অভিনীত কোনো সিনেমা মুক্তি পায় না। তুমি কি মনে করো এখানে তুমি স্বজনপ্রীতির স্বীকার?

নিঝুম রুবিনা: আমার কাছে মনে হয় ঈদের সিনেমা শুধুমাত্র শাকিব খানের জন্যই বরাদ্ধ। সেই সময় নিজের সিনেমা মুক্তি নিয়ে যুদ্ধে না জড়িয়ে অন্য সময় যদি আমার সিনেমা মুক্তি পায় তাহলে আমার নিজের একটা জায়গা তৈরি হয় কিন্তু যদি ঈদের সময় শাকিব খানের সিনেমার সাথে আমার অভিনীত সিনেমা মুক্তি পায় তাহলে আমি হারিয়ে যাবো। শাকিব খানের সিনেমার সাথে সাধারণত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যান্য সিনেমাগুলো আশানুরুপ ফলাফল অর্জন করতে পারে না। এটা পূর্বেও হয় এসেছে, এখন তো এটা আরো বেশি প্রমাণিত।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ভারতে আমরা দক্ষিনী সিনেমায় নয়নতারাকে লেডি সুপারস্টার হিসেবে পেলেও বাংলাদেশে কোনো লেডি সুপারস্টার কেন পাচ্ছি না বলে তোমার মনে হয়?

নিঝুম রুবিনা: সারা বিশ্বেই সিনেমায় নায়িকাদের নায়কদের পাশাপাশি গল্পের প্রযোজনে অলংঙ্কার হিসেবেই রাখা হয়। আপনি কোথাও দেখবেন না নায়িকাকে সিনেমার গল্পে নায়কের চেয়ে বেশি প্রাধন্য দেওয়া হচ্ছে। তবে এক সময় প্রেমের গল্পের সিনেমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঠিকই ছিলো।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: কিন্তু হলিউডের সিনেমা লারা ক্রফট: টম্ব রাইডারে তো আমরা অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে লেডি সুপারস্টার হিসেবে তো ঠিকই পাচ্ছি…

নিঝুম রুবিনা: অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সে একজন। তার সাথে কারো তুলনা হয় না।  সে একাই সব ডমিনেট করছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী  সে নিজেই। অন্যদিকে আপনি যদি বলিউড ও দক্ষিনী সিনেমা শিল্পের দিকে দেখেন, সেখানে দীপিকা পাডুকোন, ঐশ্বর্য রাই, কৃতি স্যানন, শ্রুতি হাসান, তামান্না ভাটিয়া, সামান্থা রুথ প্রভু, রাকুল প্রীত সিং, রাশি খান্না সহ অন্যান্য নায়িকা থাকলেও কিন্তু বেলা শেষে নায়করাই হচ্ছে সিনেমার প্রাণ আর নায়িকারা হচ্ছেন সিনেমার অলংঙ্কার। এটা সারা বিশ্বব্যাপীই আপনি দেখতে পাবেন। তবে এক্ষেত্রে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এক্সেপশনাল।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বাণিজ্যিক ঘরানার পাশাপাশি আমরা ধ্রুপদী সিনেমায় তোমাকে দেখতে পাই না কেন?

নিঝুম রুবিনা: সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে আমি আমার পরিবারের কাছে ও নিজের কাছে কিছু বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ। বিশেষ করে গল্পে প্রযোজনে কিছু দৃশ্য অভিনয় ও খোলামেলা পোশাক পরিধান করা আমাকে দিয়ে কখনোই হবে না। তাই আমাকে দিয়ে কখনোই ধ্রুপদী কিংবা অফট্র্যাক গল্পের সিনেমায় অভিনয় কখনোই হবে না।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় থেকে আমরা কি কখনো তোমাকে কোনো উন্নয়ন সংস্থার সাথে কাজ করতে দেখবো?

নিঝুম রুবিনা: আমি বিশ্বাস করি কারোর জন্য কাজ করলে তা গোপনে করাই শ্রেয়। তাই প্রচার প্রচারণা করে কোনোউন্নয়ন সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কিংবা শুভেচ্ছা দূত হয়ে আমি কাজ করতে কখনোই আগ্রহী না। এক্ষেত্রে আমি নিজেকে একটু আড়ালেই রাখতে চাই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে দেখা গেলো নির্বাচন আসলেই তারকাদের রাজনীতিতে খুব বেশী আগ্রহী দেখা যায়। যেহেতু তুমি রাজনৈতিক পরিমন্ডলেই আছো, সেহেতু তোমাকে কি আমরা রাজনীতিতে ভবিষ্যতে পাবো?

নিঝুম রুবিনা: যদিও আমার স্বামী রাজনীতি করেন। কিন্তু আমি রাজনীতি করবো এমনটা সম্ভবত আমাকে দিয়ে কখনোই হবে না, কারণ আমি রাজনীতি বুঝি না। তাছাড়া আমি শোবিজ দুনিয়ায় সবার ভালোবাসা নিয়ে আছি, আমি এটা নিয়ে থাকতে চাই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তুমি কি ভাইরালে বিশ্বাসী?

নিঝুম রুবিনা: আমার ভাইরাল হওয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই। আমি আমার কাজের মাধ্যমে সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে আমার দর্শকদের হৃদয়ে নিঝুম রুবিনা হিসেবে থাকতে চাই।আমি ভাইরাল হতে চাই না।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সাংবাদিকতায় ‘ভাইরাল’ বিষয়টিকে তুমি কিভাবে মূল্যায়ন করো?

নিঝুম রুবিনা: আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি বাক্যের একটা যোগসূত্র থাকা উচিত। আলোচনায় থাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট অংশ রিলস হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করাটা ঠিক না। বরং যেই বিষয়ের উপর কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তার পুরো অংশ নেটিজেনদের জন্য প্রকাশ করা উচিত।

ছবি সংগ্রহ: ট্রেন্ডিরিডারডটকম
তানজিল আহমেদ জনি/ জন/ বিনোদন/ ১৪ জুলাই ২০২৪

You may also like...