‘আমি এখনো আমার আমিকে খুঁজে পাইনি’: রিফাত জাহান

নাটক পাড়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান তৈরি করছেন হালের তরুণ সুন্দরী মডেল ও অভিনেত্রী রিফাত জাহান। যার অভিনীত প্রজেক্টগুলো ইতোমধ্যে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। 

সম্প্রতি ব্যক্তি জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের অভিনয় ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের ইনফ্লুয়েন্সার তানজিল আহমেদ জনি এর মুখোমুখি হয়েছিলো রিফাত জাহান।

 
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: মডেলিং দিয়ে মিডিয়ায় পথচলা শুরু হলেও খুব দ্রুত তুমি নাটকে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হযে উঠলে কেন?
রিফাত জাহান: মডেলিংয়ের শুরুতেও আমার কোন পরিকল্পনা ছিলো না। ফেসবুকে আমার ছবি দেখে কয়েকজন মডেলিংয়ের প্রস্তাব দিলে আমি মডেলিং শুরু করি। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে মডেলিং করতে আমার খুব ভালো লাগলেও অভিনয়ে প্রতিনিয়ত নিজের চরিত্রকে ভেঙ্গে নতুন একটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ আমার খুব ভালো লাগতে শুরু করে। সেই থেকেই নাটকে অভিনয়ের প্রতি বেশি ভালোলাগা শুরু কিংবা আগ্রহী হয়ে উঠা।
 
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: অভিনয়ের প্রতি যদি তোমার এত ভালোলাগা কাজ করেই থাকে তাহলে তুমি ফিল্ম এন্ড মিডিয়া নিয়ে পড়াশুনা না করে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে কেন?

রিফাত জাহান: ছোটবেলা থেকেই আমার ছবি আঁকার উপর অনেক বেশি আগ্রহ ছিলো, তাই ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিলো আমি চারুকলায় পড়াশুনা করবো। কিন্তু ব্যাটে বলে মিলেনি বিধায় আমি ভাবলাম আর্ট সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করি, সেই উদ্দেশ্যে থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশুনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কোন থিম প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা হয়েছে?

রিফাত জাহান: আমার পাইলট প্রজেক্টের অংশ হিসেবে আমি বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছি। তবে এখন পুরোদস্তর অভিনয়ে মনোযোগ দেওয়ার কারণে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে নতুন কিছু করবো সেই সময় হয়ে উঠছে না। তবে আমি ফ্যাশন সেক্টরে নতুন কিছু উপহার দিবো সেই পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য প্রতিনিয়ত অবসর সময় পেলেই গবেষণার কাজটি করছি।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: ছোটবেলায় তোমার স্বপ্ন ছিলো পাইলট হওয়ার, কিন্তু তুমি হয়ে গেলে অভিনেত্রী। এক্ষেত্রে কি ধরে নেয়া যায় তুমি ভ্রমণ করতে বেশ আগ্রহী? কিন্তু যেহেতু পাইলট হয়ে বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হয়নি তাই প্রথমে নাটকের অভিনেত্রী, পরবর্তীতে সিনেমার নায়িকা তকমা লাগিয়ে বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করার জন্য কি নাটকের অভিনয়ে নিয়মিত হলে?

রিফাত জাহান: আচ্ছা, ভেরি গুড কোশ্চেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরে পাইলট হওয়ার জন্য আমি ভর্তি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমার পরিবার থেকে আমাকে পেশা হিসেবে পাইলট হওয়ার জন্য সম্মতি দেওয়া হয়নি। তাই আর পাইলট হওয়া এখন অবধি হলো না। তবে আমার ছোটবেলা থেকে আমার সাবকনশাস মাইন্ডে ভ্রমণের প্রতি একটা সুপ্ত বাসনা সবসময় ছিলো। তবে আমার সেই সুপ্ত বাসনা পূর্ণ করার জন্য আমি অভিনয়ে নিয়মিত হয়েছি কিংবা অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়েছি কিনা আমি জানি না। তবে আমি পরিকল্পনা করে অভিনয় করা শুরু করিনি, বলা যেতে পারে আমি ঘটনাক্রমে অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে গিয়েছি।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তাহলে দেখা যাচ্ছে, তোমার জীবনে কোনো কিছুই পরিকল্পনা মাফিক চলছে না। সবই ঘটনাক্রমে ঘটছে। তাহলে তোমার জীবনের মূল লক্ষ্য আসলে কি? তুমি কি এখনো তোমার তুমিকে খুঁজে পাওনি?

রিফাত জাহান: হ্যা, এটা বলতে পারেন, আমি এখনো আমার আমিকে খুঁজে পাইনি। আমি সময়ের স্রোতের সাথে ভেসে যাচ্ছি। কারণ একমাত্র মৃত মাছ স্রোতের সাথে ভেসে যায়। এটা মোটেও আমার জন্য ঠিক না, তা আমি জানি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমি দেখেছি, আমার জীবনে পরিকল্পনা মাফিক কিছুই হয়নি। তাই এখন আমি আজকের দিনে আমার যা করতে ভালো লাগছে আমি সেটাই করি। এখন আর কোন পরিকল্পনা করি না। কারণ যখনই পরিকল্পনা করি তখনই সেটা হয় না, ফলে আমার হৃদয় ভেঙ্গে যায়। তাই জীবনে এখন আর কোনো পরিকল্পনা করি না।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: যেহেতু তুমি হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বললে, তাহলে তুমি ব্যক্তিজীবনে খুবই ইমোশনাল হওয়ার কারণেই কি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছো না?

রিফাত জাহান: বুদ্ধিমানের জন্য ইশারা যথেষ্ট। তাই আমি বলতে চাই, আমি কিছুটা ওল্ড স্কুল টাইপ মেয়ে। যদিও আমার কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে কিন্তু সেটাও হবে শখের বশে কিন্তু সিরিয়াসলি সেটাও নিয়মিত করবো না। আসলে আমার ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি কাজ হচ্ছে শখের বশে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: সব কিছু যদি শখের বশে হয় তাহলে তুমি জীবনে আসলে কি করতে চাও?

রিফাত জাহান: আমি জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে উপভোগ করতে চাই। জীবনে অনেক মজা করতে চাই, বিশ্ব ভ্রমণে বের হতে চাই। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি, শিল্প, ফুড কালচার ইত্যাদি দেখতে চাই।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: খন্ড নাটক ও ধারাবাহিক নাটক – এই দুই ঘরানার নাটকের কোনটিতে তুমি অভিনয় করতে গিয়ে নিজের অভিনয়ের সবটুকু জ্ঞান তুমি ব্যবহার করতে পারো?

রিফাত জাহান: এক কথায় এটা সম্পূর্ণ নাটকের গল্পের উপর নির্ভর করে।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: অভিনয়ের সময় কাজের ক্ষেত্রে কেমন ধরণের পরিবেশ একজন অভিনেত্রীকে তৈরি করতে সক্ষম বলে তুমি মনে করো?

রিফাত জাহান: একটু ব্যক্তিগত উদাহরণ টেনে বলছি। অনেক সময় এমন হয় যে, আমি হয়ত কোনো কারণে ভালোমত কোন গল্পে আমার জন্য নির্ধারিত চরিত্রের চরিত্রায়ণ করতে পারছি না, তখন বেশিরভাগ সময় আমার সহশিল্পী আমাকে আমার চরিত্রের চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহযোগিতা করে। যখন কোনো প্রজেক্টের গল্প খুব ভালো হয়, অভিনয় শিল্পী নির্বাচন ভালো হয়, সহশিল্পীরা ভালো হয়, নির্মাতা ভালো হয়, তখন নিজের সবটুকু দিয়ে অভিনয় করা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কোনো চেষ্টার প্রয়োজন হয় না।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তুমি মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে কি নেপোটিজমের স্বীকার কখনো হয়েছো বা হচ্ছো?

রিফাত জাহান: আমার অভিনয় জীবনে এখনো এমন ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। কখনো কোন অভিনয়ের প্রজেক্টে কাজ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টাও করিনি। এসব বিষয়ে আমার কোন বিশেষ আগ্রহ নেই। আসলে আমার কোন কিছু নিয়েই আমার কোন অভিযোগ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, আমি যতটুকু কাজ করি তাতেই আমি অনেক খুশি।

ট্রেন্ডিরিডারডটকম: তুমি কি ক্যারিয়ারে ধীরে চল নীতিতে বিশ্বাসী নাকি ভাইরাল নীতিতে বিশ্বাসী?
রিফাত জাহান: আমি ভাইরাল হওয়ার বিষয়গুলোও ঠিকমত বুঝতেও পারি না এবং এগুলোতে আগ্রহও নেই। আমি সবসময় ধীরে চলতে পছন্দ করি। আমি সবসময় আমার ভালোলাগার কাজগুলো করতে বেশি আগ্রহী। আমি কাজের ক্ষেত্রে সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী না।
 
ছবি সংগ্রহ: রিফাত জাহানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে।
তানজিল আহমেদ জনি/ জন/ বিনোদন/ ০৯ নভেম্বর ২০২৪

You may also like...