‘আমার যখন যেটা ইচ্ছে হয় আমি সেটাই সংগ্রহ করি’ : রকিবুল ইসলাম জন
প্রভাবশালী মিডিয়া ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠলেও সবসময় নিজেকে আলাদাভাবে নিজের নামে পরিচিত হতে আগ্রহী তরুণ কালেক্টর রকিবুল ইসলাম জন। ইতিহাস, মহাকাশ নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি অবসরের পুরো সময় কাটে ফিলাটেলিকে ঘিরে।
সম্প্রতি ফিলাটেলি ও নিজের ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ট্রেন্ডিরিডারডটকমের ইনফ্লুয়েন্সার তানজিল আহমেদ জনি এর মুখোমুখি হয়েছিলেন জন।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: প্রথম স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার গল্পটা কেমন ছিলো? কেন স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার ইচ্ছে হলো?
রকিবুল ইসলাম জন: প্রথম স্ট্যাম্প বা ডাকটিকিট সংগ্রহ শুরু হয় আমার একমাত্র বড় ভাইয়ের মাধ্যমে, যিনি একাধারে পেইন্টার, সিনিয়র বিনোদন সাংবাদিক, ফ্যাশন ফটোগ্রাফার, সাবেক রোটার্যাক্ট, রোটারিয়ান ও অ্যানিমেল অ্যাক্টিভিস্ট। তার নামটি ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখলাম। তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি, ২০০১ সালে। বড় ভাইয়ের স্ট্যাম্প অ্যালবাম এবং ঘরের স্টোর রুমে থাকা পুরোনো চিঠির খামে স্ট্যাম্প দেখেই স্ট্যাম্প সংগ্রহের ভূতটা মাথায় চাপে। ছোটবেলায় আমার মনে হতো, স্ট্যাম্প ইতিহাসের একটি অংশ। তাই স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা মানে ইতিহাসের অংশ হওয়া। সেই চিন্তাধারা থেকেই স্ট্যাম্প সংগ্রহের ইচ্ছেটা শুরু। পরবর্তীতে জানলাম স্ট্যাম্প সম্পর্কিত অধ্যয়নকে ফিলাটেলি বলা হয় এবং স্ট্যাম্প সংগ্রহকে শখের রাজা বা রাজার শখও বলা হয়।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে শুরুতে কি রকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
রকিবুল ইসলাম জন: স্ট্যাম্প সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল স্ট্যাম্প বিক্রেতাদের ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার বিষয়টা। যেহেতু সে সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচলন ছিল না আর স্কুল-কোচিং-বাসা ছাড়া কোথাও তেমন যাতায়াত না থাকায় স্ট্যাম্পের জন্য বন্ধু-বান্ধবী কিংবা এলাকার মুরুব্বীদের প্রবাসী আত্নীয়-স্বজনের চিঠির অপেক্ষায় থাকতাম। আগেই বলে রাখতাম, চিঠি আসলে যেন আমাকে খামটা দেওয়া হয়। খাম পেলেই সেটাকে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে স্ট্যাম্পগুলো আলাদা করে ফেলতাম। এতে কিছু স্ট্যাম্প নষ্ট হতো, আবার কিছু স্ট্যাম্প খুব সুন্দরভাবে খাম থেকে আলাদা হয়ে যেত। এখনকার দিনে তো ফেসবুক ঘাঁটলে অনেক গ্রুপ আছে যারা অনলাইনে স্ট্যাম্প, কয়েন, ব্যাংকনোট ইত্যাদি বিক্রয় করে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: স্ট্যাম্পের পাশাপাশি আর কি কি সংগ্রহ করেন?
রকিবুল ইসলাম জন: স্ট্যাম্পের পাশাপাশি কয়েন, ব্যাংকনোট, ফার্স্ট ডে কভার, মিনিয়েচার শীট, সুভ্যেনির শীট, পারফিউমড স্ট্যাম্প এবং অড সাইজ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করি। স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতে গিয়ে পরবর্তীতে কয়েন এবং ব্যাংকনোট সংগ্রহের দিকে ঝুঁকে পড়ি। কয়েন এবং ব্যাংকনোট সম্পর্কিত অধ্যয়নকে নিউমিসম্যাটিক বলা হয়। স্ট্যাম্পের ক্ষেত্রে ইউজড এবং মিন্ট দুটোই সংগ্রহ করি। কয়েনের ক্ষেত্রে ডেড কান্ট্রিকে বেশী প্রাধন্য দেই এবং ব্যাংকনোটের ক্ষেত্রে প্রচলিত এবং ডেড কান্ট্রির ইউএনসি নোট সংগ্রহ করি। তবে ইউজড ব্যাংকনোটেরও একটি বড় বাজার আছে। ভাবছি আগামীতে ইউজড ব্যাংকনোটও সংগ্রহ করবো। তাছাড়া আমি ছোটবেলা থেকেই স্ট্যাম্প, কয়েন এবং ব্যাংকনোটকে একটি আর্টওয়ার্ক হিসেবে দেখি।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: স্ট্যাম্প, কয়েন কিংবা ব্যাংকনোট সংগ্রহের ক্ষেত্রে একাল-সেকাল এর পার্থক্য কোথায়?
রকিবুল ইসলাম জন: স্ট্যাম্প সংগ্রহের ক্ষেত্রে একাল-সেকালের পার্থক্যটা হচ্ছে, ছোটবেলায় খাম থেকে স্ট্যাম্পগুলো আলাদা করে তা সংগ্রহের যে একটা আনন্দ ছিল, এখন আর সেই আনন্দটা পাওয়া যায় না। এখন চাইলেই মূহুর্তের মধ্যে পছন্দসই মিন্ট বা ইউজড স্ট্যাম্প অনলাইন থেকেই ক্রয় করা যায়। তাই এখনকার কালেক্টররা সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর কয়েন এবং ব্যাংকনোটের ক্ষেত্রেও বাজারে যখন নতুন টাকা ছাড়া হতো, তখন কম-বেশী সবাই ইউএনসি কয়েন কিংবা নোট সংগ্রহ করতো। কিন্তু এখন আর সেই কালচারটা দেখা যায় না। এখন সালামির উদ্দেশ্যে নতুন নোট কেনার প্রবণতা শুধুমাত্র দুই ঈদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: নতুন প্রজন্ম স্ট্যাম্প সংগ্রহে কেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে?
রকিবুল ইসলাম জন: বর্তমান প্রজন্ম ফিলাটেলি বা নিউমিসম্যাটিক সম্পর্কে হয়তো খুব কমই জানে। আর ক’দিন পর এই জেনারেশন হয়তো জানবেই না যে, ফিলাটেলি বা নিউমিসম্যাটিক বলতে যে একটি শখ আছে। তাই নতুন প্রজন্ম যারাই স্ট্যাম্প, কয়েন বা ব্যাংকনোট সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছে বা সংগ্রহ করছে, তাদের অধিকাংশের অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে, পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসেবে এসব পেয়ে তা সংগ্রহ করে যাচ্ছে আবার কেউবা এর মূল্য না বুঝেই বিক্রয় করে দিচ্ছে। তাই নতুন প্রজন্মকে স্ট্যাম্প, কয়েন বা ব্যাংকনোট সংগ্রহে উৎসাহ দিতে হবে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: বর্তমানে স্ট্যাম্প অ্যালবামের হঠাৎ সংকটের কারণ কি?
রকিবুল ইসলাম জন: শুধু স্ট্যাম্প অ্যালবামই নয়, কয়েন এবং ব্যাংকনোট অ্যালবামের ক্ষেত্রেও একটি সংকট তৈরী হয়েছে। বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত কালেক্টিবল আইটেম থাকলেও তা সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত অ্যালবাম নেই। কোন কোন বিক্রেতা আবার সেকেন্ড হ্যান্ড অ্যালবামও বিক্রয় করছে। আপাতত কালেক্টররা সিঙ্গেল লুজ শিটে স্ট্যাম্প, কয়েন বা ব্যাংকনোট সংগ্রহ করছে।
ট্রেন্ডিরিডারডটকম: নতুন কালেক্টরদের কোন পরামর্শ দিতে চান?
রকিবুল ইসলাম জন: পরামর্শ দেওয়া বিশেষজ্ঞদের কাজ, আমি কালেক্টর। আমার ক্ষেত্রে আমার যখন যেটা ইচ্ছে হয় আমি সেটাই সংগ্রহ করি।
ছবি সংগ্রহ: রকিবুল ইসলাম জন
তানজিল আহমেদ জনি/ লাইফস্টাইল/ ৪ জুন ২০২৪